মৎস্য নির্দেশিকা

ভূমিকা:

হাজার বছরের প্রচলিত প্রবাদ 'মাছে ভাতে বাঙালি'। তাই মাছ ভিন্ন বাঙালির খাদ্য তালিকা অসম্পূর্ণ প্রায়। আঠারো কোটি বাঙালির এই বাংলাদেশে আমিষের দৈনন্দিন চাহিদা পূরণের জন্য মাছের ভূমিকা অনস্বীকার্য। এই অধিক জনসংখ্যার আমিষের চাহিদা মেটাতে আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষের বিকল্প নেই। আর আধুনিক পদ্ধতিতে মাছ চাষে সর্বোচ্চ ফলাফল পেতে প্রয়োজন একটি 'আদর্শ ফিস ফিড'। বাস্তব অভিজ্ঞতা সম্পন্ন একদল প্রতিশ্রুতিশীল যুবক 'মাইলস্ এগ্রো ফিড' এর ব্যানারে মাছ চাষীদের জন্য বাজারে নিয়ে এলো উন্নত প্রক্রিয়ায় তৈরি এবং গুণগত মানসম্পন্ন 'মাইলস্ ফিস ফিড'। বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষে চাষীদের নির্ভরযোগ্য প্রতীক 'মাইলস্ ফিস ফিড'। তবে মাছ চাষীদের অবশ্যই আধুনিক পদ্ধতিতে ও বিজ্ঞান সম্মতভাবে মাছ চাষের জন্য খাদ্য ছাড়াও অন্যান্য দিকগুলো ভালোভাবে জানা ও পালন করা আবশ্যক। আমাদের প্রতিশ্রুতিশীল 'মাইলস্ ফিস ফিড' বাংলাদেশের মৎস্য শিল্পের বিকাশে অগ্রণী ভূমিকা রাখবে।

বৈশিষ্ট্য:

  • দেশের খ্যাতনামা পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের দ্বারা আধুনিক প্রযুক্তিতে ও যত্নসহকারে মেশিনে উৎপাদিত হয়।
  • উচ্চতাপে ও বাষ্পীয় চাপে তৈরী বিধায় খাদ্য সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত।
  • পানিতে স্থায়িত্ব বেশি হওয়ায় মাছ সহজে খাদ্য গ্রহণের সুযোগ পায়।
  • আকর্ষণীয় ঘ্রাণ ও পিলেট আকৃতির হওয়ায় মাছের নিকট খাদ্য সহজেই গ্রহণযোগ্য।
  • উন্নত খাদ্য রূপান্তর অনুপাতের নিশ্চয়তা প্রদান।
  • মাছের দ্রুত বৃদ্ধি নিশ্চিত করে, ফলে কম সময়ে মাছ চাষে অধিক আয় হয়।
  • উৎপাদনের প্রতিটি ধাপে কঠোরভাবে মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা হয়।

মাছ চাষে অবশ্য পালনীয় বিষয়সমূহঃ

বাণিজ্যিকভাবে আধুনিক পদ্ধতিতে ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে মাছ চাষের জন্য নিম্নলিখিত বিষয়সমূহের প্রতি অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে-

পুকুর নির্বাচন ও প্রস্তুতি:

পুকুর আয়তাকার, বন্যাযুক্ত ও তলদেশ সমান হওয়া বাঞ্চনীয়। পুকুরের গভীরতা ৫-৬ ফুট আয়তন ১-২ একর (৩-৬ বিঘা) হলে ভালো হয়। পুকুরের প্রয়োজন অনুযায়ী পানি সরবরাহ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থা থাকতে হবে। পুরাতন পুকুর হলে পুকুরের পাড় ও তলা মেরামত করে আগাছা অপসারণ, রাক্ষুসে ও অবাঞ্ছিত প্রজাতির মাছ দমন করতে হবে। গুণা, কৈ, শিং ও মাগুর মাছ চাষের জন্য পুকুরের চারিদিকে জ‍াল/নেট দিয়ে ২ ফুট উচ্চতায় ঘের দিতে হবে।

মাছ চাষে মাটি ও পানির প্রধান প্রধান ভৌত রাসায়নিক গুণাবলী:

ক্রঃ উপাদান মান বা উপাদান
মাটির ধরন দোআঁশ, বেলে-দোআঁশ, এঁটেল
মাটির পিএইচ ৫.৫ থেকে ৬.৫
পানির পিএইচ ৭.০ থেকে ৮.৫
দ্রবীভূত অক্সিজেন ৫-৭ মিলিগ্রাম/লিটার
তাপমাত্রা ২৮°-৩২° সেলসিয়াস
স্বচ্ছতা ২৫-৩৫ সেন্টিমিটার
হাইড্রোজেন সাধারণত < ০.০০৩ মিলিগ্রাম/লিটার
আন-আয়োনাইজড অ্যামোনিয়া < ০.১ মিলিগ্রাম/লিটার
কার্বন-ডাই-অক্সাইড < ২ মিলিগ্রাম/লিটার

পুকুর প্রস্তুতি:

মাছ চাষের সফলতা অনেকটাই নির্ভর করে সুষ্ঠুভাবে পুকুর প্রস্তুতির উপর। পুকুর সঠিকভাবে প্রস্তুত করা না হলে মাছ রোগাক্রান্ত হওয়া, স্বাভাবিক বৃদ্ধি না হওয়া, পোনা অবস্থায় মৃত্যুর হার বেশি হওয়াসহ নানা সমস্যা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। বিজ্ঞান-সম্মতভাবে পুকুর প্রস্তুতির জন্য অবশ্য করণীয় বিষয়সমূহ-

  • পুকুরের পাড় যথাসম্ভব মজবুত রাখা। পুকুর পাড়ে কোন ভাঙা পরিলক্ষিত হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মেরামত করতে হবে।
  • পুকুর পাড়ে কোন গর্ত দেখা দিলে কাঁকড়া বা ইঁদুর দমনপূর্বক গর্ত বন্ধ করে দিতে হবে।
  • পুকুরের পানি এমনভাবে শুকোতে হবে যেন পুকুরের তলদেশের মাটি ফেটে যায়।
  • জলজ আগাছা সূর্যের আলো সরাসরি পুকুরের তলায় পৌঁছাতে বাধা দেয়, ফলে খাদ্য উৎপাদনে ব্যাঘাত হয়, মাছ সহজে চলাচল করতে পারে না, আগাছা পঁচে পানির গুণাগুণ নষ্ট করে এবং পুকুরে গ্যাস হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এজন্য কচুরিপানা, হেলেনচা, টোপাপানা, কলমিলতা ইত্যাদি জাতীয় আগাছা হতে পুকুর পরিষ্কার রাখতে হবে। কোনো কারণে পুকুরের তলদেশ শুকানো সম্ভব না হলে নিম্নলিখিত রাসায়নিক পদার্থ প্রয়োগ করে পুকুর প্রস্তুত করা যাবে।

চুন প্রয়োগ:

পুকুরের পানির পরিবেশ রক্ষা, মাটি ও পানির পিএইচ এর মান বৃদ্ধি, মাটির জীবাণুমুক্তাল, বিভিন্ন খনিজের প্রাচুর্য বৃদ্ধি, মাছের রোগবালাই দূর করা, ঘোলা পানি পরিষ্কার এবং বিষাক্ত গ্যাস দূর করার জন্য পুকুরে চুন প্রয়োগ করা আবশ্যক।

পুকুরে কখন চুন প্রয়োগ করতে হবে:

  • পুকুর প্রস্তুতির সময় চুন প্রয়োগ করতে হবে।
  • পুকুরের রোটেনন বা অন্য কোন বিষাক্ত রাসায়নিক উপাদান প্রয়োগ করার পর পানির বিষক্রিয়া নষ্ট করতে চুন দিতে হবে।
  • পানির পিএইচ কমে গেলে চুন দিতে হবে।
  • পুকুরের তলদেশে অধিক কাঁদা এবং অ্যামোনিয়া গ্যাস জমা হলে চুন দিতে হবে।
  • প্লাঙ্কটন মরে পুকুরের পানি ঘোলা বা দূর্গন্ধ হলে চুন দিতে হবে।
  • পুকুরে বন্যার পানি প্রবেশ করলে চুন দিতে হবে।

সার প্রয়োগ:

চুন প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর অথবা মাছের পোনা ছাড়ার ৮-১০ দিন পূর্বে সার প্রয়োগ করতে হবে। সকল ধরণের সার প্রয়োগের পূর্বে পানিতে মিশিয়ে প্রয়োগ করতে হবে। মেঘলা দিনে অথবা বৃষ্টির সময় সার প্রয়োগ করা যাবে না। বরং সার প্রয়োগের জন্য রৌদ্রোজ্জ্বল বা স্বাভাবিক আবহাওয়ার প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।

পোনার জাত নির্বাচন ও সংগ্রহ:

মাছ চাষের পূর্বশর্ত হচ্ছে সুস্থ সবল এবং ভালো জাতের পোনা সংগ্রহ। এই ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক জলাশয় যেমন- পদ্মা, যমুনা, হালদা প্রভৃতিতে না হলে সরকারি বা ভাল মানের হ্যাচারী থেকে সংগৃহীত ডিম হতে উৎপাদিত পোনা সংগ্রহ করে মাছ চাষ করতে হবে। বাজারে বিভিন্ন বয়সের ও আকারের পোনা পাওয়া যায়, বড় আকারের পোনা সহজলভ্য না হলে খামারে নার্সারী পুকুরের ব্যবস্থা থাকতে হবে। পোনা সংগ্রহের সময় নিম্নলিখিত বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে-

  • পোনা সুস্থ সবল কিনা? সুস্থ সবল পোনা হবে চঞ্চল, উজ্জ্বল এবং ত্বক হবে পিচ্ছিল ও চকচকে।
  • পোনা হবে ইন্দ্রিয়ক্রীয় সমস্যা হতে মুক্ত।
  • পোনা হবে রোগ বা ক্ষত হতে মুক্ত।
  • উৎপাদিত পোনার গ্রুপের আকার যথেষ্ট বড় হতে হবে।
  • পোনা হতে হবে একই বয়স এবং একই আকারের।

পোনা অবমুক্তকরণ:

পোনা অবমুক্ত করার আগে নিম্নলিখিত বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে:

  • সকাল অথবা বিকাল যখন তাপমাত্রা কম থাকে তখন পোনা ছাড়ার সঠিক সময়। দুপুরের প্রখর রোদে, মেঘলা দিনে, অবিরাম বৃষ্টির সময় এবং নিম্নচাপের সময় পোনা ছাড়া উচিৎ নয়।
  • পুকুরের যেখানে ছায়া পড়ে সেখানে পোনা ছাড়ার স্থান নির্বাচন করতে হবে।

পোনা ছাড়ার পরবর্তী করণীয়:

মাছ ছাড়া হয়ে গেলে যথাযথভাবে প্রতিপালনের উপর নির্ভর করে বাণিজ্যিকভাবে মাছ চাষের লাভ-লোকসান। তাই এ পর্যায়ে অবশ্য পালনীয় বিষয়সমূহ নিম্নরূপ:-

  • চাষকালীন সময়ে পুকুরে পানির পরিবেশ যেমন-পানির রং, ঘোলা, স্বচ্ছতা, দ্রবীভূত অক্সিজেন, প্লাঙ্কটনের উপস্থিতি যথাযথভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।
  • প্রতিদিন নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট স্থানে খাদ্য প্রয়োগ করতে হবে। খাদ্য ট্রে-পদ্ধতিতে দিলে ভাল।
  • প্রতি ১০-১৫ দিন পর পর মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করলে খাদ্যের কার্যকারিতা (খাদ্য রূপান্তর হার বা এফ.সি.আর) সহজেই জানা যাবে।
  • বৃষ্টিপাত, ঘনকুয়াশা এবং অধিক তাপমাত্রা ৩৮° সেলসিয়াস এর উপরে এবং নিম্ন তাপমাত্রা ১০° সেলসিয়াস এর নিচে হলে পুকুরে খাদ্য দেওয়া বন্ধ রাখতে হবে।
  • ক্যাটফিস জাতীয় মাছের ক্ষেত্রে দৈনিক সন্ধ্যার পর এবং ভোর রাত্রে খাদ্য প্রয়োগ করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।

মাছের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা:

  • মাছের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে প্রতিদিন নিয়মিত জাত, বয়স এবং ওজন ভেদে খাদ্য প্রয়োগের পরিমাণ কম বা বেশি করতে হবে।
  • পুকুরে বসবাসকারী পরজীবী নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
  • শীতকালীন রোগ বালাই থেকে পুকুরের মাছ রক্ষা করতে আশ্বিন-কার্তিক (অক্টোবর-নভেম্বর) মাসে বিঘা প্রতি ১০ (দশ) কেজি চুন প্রয়োগ করতে হবে এবং ৭ (সাত) দিন বিরতিতে ১০ (দশ) কেজি লবণ প্রয়োগ করতে হবে। এভাবে পর পর দুইবার প্রয়োগ করলে মাছের রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
  • এছাড়া মাছের স্বাস্থ্যগত এবং মাছ চাষে ব্যবহৃত সকল প্রকার উপকরণজনিত যেকোন সমস্যার জন্য আপনাদের সহযোগিতায় সর্বদা প্রস্তুত থাকবে ‘মাইলস্ এগ্রো ফিড’ এর প্রতিশ্রুতিশীল একদল মেধাবী তরুণ মৎস্য বিশেষজ্ঞ ও টেকনোলজিষ্ট (ফার্মাসিষ্ট)।

চাষের পুকুরে ওজন অনুযায়ী মাছের ঘনত্বঃ (৩৩ শতাংশ বা ১ বিঘা)

ক্রঃ মাছের নাম মাছের সাইজ/ওজন মাছের পরিমাণ
কাতলা ১ কেজি+ ৩০-৫০ পিচ
রুই ৫০০ গ্রাম হতে ১ কেজি ১৭০-১৫০ পিচ
মৃগেল ৫০০ গ্রাম+ ২০ পিচ
ক্রস বাউশ ৫০০ গ্রাম হতে ১ কেজি ৩০-৫০ পিচ
সিলভার কার্প ৪০০-৪০০ গ্রাম ৬০-৫০ পিচ
বিগহেড ১ কেজি ৩ পিচ
গ্রাস কার্প ৫০০ গ্রাম+ ২ পিচ
ব্ল্যাক কার্প ৫০০ গ্রাম+ ৩ পিচ
শুলশা ১ ইঞ্চি হতে ১ কেজি ৫০০০ পিচ (অথবা প্রতি কেজিতে ১৫০০ পিচ)

অথবা

ক্রঃ মাছের নাম মাছের সাইজ/ওজন মাছের পরিমাণ
কাতলা ৫০০ গ্রাম হতে ১ কেজি ২৫-৩০ পিচ
রুই ৫০০ গ্রাম+ ১৭০-১৫০ পিচ
ক্রস বাউশ ৫০০ গ্রাম+ ৩০-৫০ পিচ
সিলভার কার্প ৪০০-৪০০ গ্রাম ১২০-১০০ পিচ
বিগহেড ৫০০ গ্রাম+ ৩ পিচ
গ্রাস কার্প ৪০০-৪০০ গ্রাম ২৫-৩০ পিচ
ব্ল্যাক কার্প ৩০০-৪০০ গ্রাম ৩ পিচ
শুলশা ১.৫০ গ্রাম ৫০০০-৮০০০ পিচ

মাছের খাদ্য ব্যবস্থাপনাঃ শুধুমাত্র কার্প জাতীয় মাছের জন্য প্রযোজ্য (প্রতি ১০০০ মাছের জন্য)

মাছের গড় ওজন মোট ওজনের % খাদ্যের পরিমাণ দৈনিক প্রয়োগ
২৫০-৫০০ গ্রাম ৩ - ৪% ৭.৫-১৪ কেজি ২ বার
৬০০-১০০০ গ্রাম ৩ - ৩.৫% ১৮-৩৫ কেজি ২ বার
১-২ কেজি ৩ - ৩.৫% ৩০-৭০ কেজি ২ বার
২.৫ কেজি ২.৫ - ৩% ৬২.৫-১২০ কেজি ২ বার

অথবা

মাছের গড় ওজন মাছের ঘনত্ব প্রতি বিঘা প্রতি ১০০০ মাছের জন্য খাদ্যের পরিমাণ প্রতি মাসে বৃদ্ধির হার
২৫০ গ্রাম ২৫০ ৫ কেজি +২০০ গ্রাম
৫০০ গ্রাম ২৫০ ৮ কেজি +৪০০ গ্রাম
১ কেজি ২০০ ৮ কেজি +৪০০ গ্রাম
১.৫ কেজি ১৮০ ১০ কেজি +৪০০ গ্রাম
২ কেজি ১৮০ ১০ কেজি +৪০০ গ্রাম
২.৫ কেজি ১৫০ ১০ কেজি +৪০০ গ্রাম